Tuesday, January 22, 2019

#টাইম_মেশিন




ল্যাবরেটরির মধ্যে প্রায় ছুটে ঢুকে পড়লেন প্রফেসর বক্সী | বাজার থেকে ফেরার পথে গাড়িতে অয়নের ফোনটা পাওয়ার পর তিনি সোজা এখানেই এসেছেন | অয়ন তার এক সময়ের ছাত্র, বর্তমান সহকারী | শুধু কি সহকারী , তার চেয়েও অনেক বেশী |

দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই তার চোখ গেল অয়নের দিকে, সে তখন তার ল্যাপটপে একটা ভিডিও দেখছে | তার আসার শব্দ শুনেই ঘুরে দাঁড়ালো সে |

- "স্যার এই দেখুন সেই ভিডিও |"

কুকুরটা তখনও পাশে চুপটি করে বসে|

তাদের তৈরী টাইম মেশিনের প্রথম যাত্রী এই কুকুর | গলাতে একটা ক্যামকোর্ডার বেঁধে তাকে ২ মিনিট টাইমার দিয়ে পাঠানো হয়েছিল আইনস্টাইনের  ল্যাবে | আর ফিরে আসার পর ফলাফল এক কথায় অভাবনীয় | তাদের এত বছরের পরিশ্রম সফল |

কালকেই প্রায় সাফল্য এসে গিয়েছিলো কিন্তু শেষে একটা গোলমালে ঠিক জায়গাতে পৌঁছনো যাছ্ছিলোনা, ন্যাভিগেশন সিস্টেমটা ঠিক কাজ করছিলনা, ইন্টারনাল ক্লকটাও একটু গোলমাল করছিল | অনেক রাতে বাড়ি ফিরেছেন প্রফেসর বক্সী কাল, অয়ন ফেরেনি, সারা রাত ধরে পরিশ্রম করে অবশেষে সেই ত্রূটি শুধরেছে |

-" স্যার , আপনি প্রথম যাত্রী হিসেবে টাইম ট্রাভেল করুন , এ তো আপনার আবিষ্কার |"

-" না হে অয়ন, এ আমাদের আবিষ্কার | আমি যাব, সাথে তুমিও |"

চোখটা একটু চোখ চকচক করে ওঠে অয়নের |

-"স্যার , কোথায় যেতে চান ? নিউটন-এর সময়ে নাকি আইনস্টাইন ?"

একটা চুরুট ধরিয়ে প্রফেসর বক্সী বলেন ,

-"সবার প্রথমেই আমি অন্য একটা জায়গাতে যেতে চাই , আমার নিজের স্মৃতিতে |"

এই বলে নিজের মনেই গল্প টা শুরু করলেন প্রফেসর |

- " আমি তখন ফাইভ-এ | টিফিনের পর হঠাৎ স্কুলে ছুটির ঘন্টা বেজে উঠলো, তখন ১০ মিনিটও হয়নি ক্লাস শুরু হয়েছে , আমরা হতভম্ব , হেডস্যার ক্লাস এ এসে বলে গেলেন যে , দাঙ্গা বেঁধেছে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যাও , বাইরে বেরিয়ে লোকজনকে বলাবলি করতে শুনলাম বাজারে কয়েকটা দোকানে আগুন লেগেছে | আমি আর আমার ভাই আর বাকি সবার মতো ছুটলাম নিজেদের বাড়ির দিকে , তাড়াতাড়ি পৌঁছবো তাই শর্টকাটটা ধরেছিলাম, প্রায় পৌঁছে গেছি  এমন সময় পড়লাম একদল দাঙ্গাবাজের সামনে | ৪ জন , তাদের দুজনের হাতে বিরাট বড় দুটো ছোরা, প্রায় তলোয়ারের মতো | আমার গলার মাদুলিটা হাতে নিয়ে দেখে পাশের জনের দিকে তাকালো একবার, তারপর আমাকে আর ভাইকে দুজনে ধরলো | প্রথমজন আমাকে বললো -
"উপরওয়ালাকে স্মরণ করেনে |"
 আমি চোখ বন্ধ করে নিয়েছে হঠাৎ পেছনের গাছগুলোর দিক থেকে বন্দুকের শব্দ, যে দুজনের হাতে তলোয়ার ছিল, দুজনের হাত থেকে অস্ত্র পড়ে গেছে , তারা যন্ত্রণাতে কাতরাচ্ছে , বাকি দুজন খানিক এদিক ওদিক দেখে ছুটে গেলো | সুযোগ বুঝে আমরা দুজন ও দিলাম দে ছুট |

প্রাণে বেঁচে গেলাম কিন্তু জানতে পারলামনা আমাদের প্রাণরক্ষা কে করেছিল, আর তার কি হাল হয়েছিল তারপর | ভাবছি সেটা দেখা দরকার,সেদিন মারা পড়লে আজ এই যন্ত্র টা কি তৈরি হতো?"

 প্রফেসর বক্সী থামলেন | অয়ন খুব মন দিয়ে শুনছিলো, এবার সে উত্তেজিত হয়ে বললো "তাহলে সেখানেই যাওয়া যাক," দুজনে মিলে ন্যাভিগেশন সিস্টেম এ সঠিক লোকেশন টা ফিড করল |

যন্ত্রটা  দেখতে অনেকটা একটা গ্লাস এনক্লোজারের মত, আপাতত দুটো চেয়ার লাগানো আছে, প্রয়োজনে সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব| ভেতরে ঢুকে একটা হেলমেট পরে নিলো দুজনেই, হেলমেট এ ইনবিল্ট একটা হেডসেট ও গ্লাস , যেটা অনেকটা VR গ্লাস এর মত, ওরা নাম দিয়েছে TR গ্লাস, টাইমলেস রিয়েলিটি গ্লাস |

হঠাৎ প্রফেসর বক্সী হেলমেট খুলে বাইরে বেরিয়ে গেলেন, ফিরে এলেন একটা কিছু জ্যাকেটের এর ভেতরে ঢোকাতে ঢোকাতে , বললেন,

-" দাঙ্গা র মধ্যে যাছ্ছি সাথে কিছু একটা আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র থাকা দরকার, কি বল? "

অয়ন কিছু বললো না, আসলে সব ঠিক থাকলে তারা ওইযুগে অদৃশ্য হয়ে থাকার কথা , কিন্তু এখনও কিছুই বলা যায়না |

রিমোটটা প্রেস করল অয়ন, আর সাথে সাথেই চোখের সামনে তা কেমন অন্ধকার হয়ে গেলো খানিকক্ষণের জন্য, উত্তেজনায় কাঁপছে দুজনেই , কিছু মুহূর্ত পর তারা দুজনেই নিজেদের আবিষ্কার করল তারা একটা গাছের পেছনে, সামনে একটা রাস্তা, পেছনে পুকুর | ঘড়িতে ২:২০ , প্রফেসর বক্সী বললেন -

" আর খুব বেশি হলে ৫-১০ মিনিট, ঘাপটি মেরে থাকো এখানেই |"

কয়েক মুহূর্ত পেরোলো, দুটো বাচ্চা ছুটে ছুটে আসছে, হঠাৎ সামনে কিছু দেখে থমকে দাঁড়ালো, এবার মঞ্চে অবতীর্ণ হলেন ৪ জন , দুজনের হাতে ধারালো অস্ত্র |

ঠিক যেন ছায়াছবির মত ঘটে যাচ্ছে , ছেলে দুটোর সাথে কিছু কথাবার্তার পর দুজনের কলার চেপে ধরলো দলের নেতা গোছের লোক টা|

প্রফেসর বক্সী বললেন -

" এইবার ! এইবার সে আসবে , এবং নজর রাখো চারিদিকে |"

কিন্তু কেউ এলো না , অয়ন চারিদিকে চোখ বুলিয়ে বলল, "স্যার কেউ তো আসছে না "

-"আসবে, এখনই এল বলে!"

১ মিনিট কেটে গেলো, ২ মিনিট কেটে গেলো | এতক্ষনে সেই অস্ত্রধারী তাদের অস্ত্র তুলেছে , অয়ন তাকালো প্রফেসর এর দিকে , " স্যার এদের তো মেরে ফেলবে |" তার দৃষ্টি নিবদ্ধ ঘটনা যেদিকে ঘটছে সেদিকেই | হঠাৎ সে শুনতে পেলো গুলির শব্দ, সে বলে উঠলো "ওই তো !! কোন দিক থেকে এলো শব্দটা ?" প্রফেসর বক্সীর দিকে ঘুরতেই সেই দেখলো রিভলভার তা থেকে তখনও ধোঁয়া বেরোচ্ছে, আর বারুদের গন্ধ , সেই রিভলভার তাকে করে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে প্রফেসর |
অব্যর্থ লক্ষ্য, দুজনের  হাত চেপে ধরে বসে পড়লো, অস্ত্র খসে পড়েছে, বাকি দুজন এদিক ওদিক খোঁজার চেষ্টা করছে, প্রফেসর বক্সী তখনও স্থির, চোখের পাতা ফেলতেও ভুলে গেছেন| অন্য দুজন এদিকেই ছুটে আসছে এবার |

অয়ন কালবিলম্ব করল না , রিমোট প্রেস করতেই আবার চোখের সামনে অন্ধকার, আলো ফিরে এল যখন তখন তারা ল্যাবরেটরির মধ্যে পৌঁছে গেছে|

হেলমেট খুলে প্রফেসর বক্সীকে ধরে অয়ন সোফাতে বসলো, প্রফেসর তখন ও চুপ, এবার তিনি হাতের অস্ত্রটা নামিয়ে রাখলেন | চোখে মুখে প্রশ্ন ও বিস্ময় মেশানো এক অদ্ভুত অনুভূতি তাঁর | আরো কয়েক মুহূর্ত   নিস্পলক চোখে  সোজা তাকিয়ে নীরবতা ভেঙে বললেন,
-" তাহলে সে আমিই  ছিলাম !!"

No comments:

Post a Comment