Tuesday, December 18, 2018

আমার লেখা " পরকীয়া" প্রকাশিত হয়েছে বেদান্ত পত্রিকার হিমেল সংখ্যাতে |


http://himelsokal.blogspot.com/2018/11/blog-post_16.html

এগরোলে শেষ কামড়টা মেরে কাগজটা রাস্তার পাশে আস্তাকুঁড়েতে ফেলে রথীনবাবু  এগিয়ে চললেন বাড়ির দিকে| তিনি আজ সকালে গিন্নির  সাথে ঝগড়ার সময় প্রতিজ্ঞা করেছেন যে কাল থেকে আর এগরোল ছুঁয়েও দেখবেননা যতদিন না ওজন অন্তত ৫ কিলো কমাতে পারছেন |
তাই আজ বিকেলে  অফিসফেরত এগরোলটা শেষবারের মত  খেয়ে নিলেন |

বাড়ি ফিরতেই গিন্নি আবার রণমূর্তিতে|

-"পুঁটি কলেজ থেকে ফেরার পথে তোমাকে রোলের দোকানে দেখেছে? কোথায় গেলো প্রতিজ্ঞা?"

-" কি মুশকিল, কাল থেকে ছাড়বো বলেছি তো?"

গিন্নির চোখ  গোল  -" কি সব্বনেশে মানুষ দেখেছ? বয়স হতে চললো তবু নোলা এখন ও কচি খোকার মত !"
হাই কোলেস্টেরল বলে মটন রোলটা আগেই ছেড়েছেন রথীনবাবু, গিন্নির জোরাজুরিতেই আর কি!

কিন্তু পাড়ার নিতাইয়ের দোকানের এগরোলটা ছাড়তে পারছিলেন না| 

ভালোমন্দ খাওয়া - ওটুকুই তো তার জীবনের বিলাসিতা, মদ-সিগারেট-পান কোনোটারই তো নেশা নেই , কিন্তু সে কথা গিন্নিকে বোঝানো কার সাধ্যি | 

এমনিতে রথীন বাবু নির্ঝঞ্ঝাট লোক , বাড়ি-অফিস-বাজারের বাইরে বড় একটা কোথাও যান না |
জীবনটাও প্রায় খোলা খাতার মত, কেবল ওই একটি ব্যাপার ছাড়া , যার খবর তাঁর গিন্নি বা অন্য কেউ এখনও ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি, পেলেই যে সর্বনাশ সে আর বলতে?

কালও কাজের ছুতোতে সন্ধ্যেবেলাতে অফিস থেকে সেখানে গিয়েছিলেন |

সপ্তাহে অন্তত এক দুবার সেই ঠিকানায় তার যাওয়া চাই, তিনি নিজেও জানেন এটা ঠিক নয়, এই বয়েসে এইসব ঠিক হয়তো নয় | বয়স তো কম হলোনা ! মেয়ে কলেজে পড়ছে |
কিন্তু গতবার পুজোর সময় যখন তিনি প্রথম সেখানে গেলেন তারপর থেকে প্রেমে পরে গেছেন |
এই  নিষিদ্ধ লালসার হাতছানি এড়িয়ে যাওয়া ক্রমশ অসম্ভব হয়ে উঠেছে ,আকর্ষণ অমোঘ হয়েছে ক্রমে |

তাকে দুশ্চরিত্র কেউ বলবেনা বা দুঃসাহসীও নয়| বৌ কে তিনি সমীহ করেই চলেন, আর মেয়েটাও হয়েছে সেরকম, এক্কেবারে মায়ের কাৰ্বন কপি | বৌ মেয়ের জেরার সামনে পড়লে অসহায়ের মত সব কথাই গড়গড় করে বলে ফেলেন তিনি, কিভাবে এই একটা কথা গোপন রেখেছেন তিনি ই জানেন |

দিন কয়েক পর বিকেলে অফিসের বড়বাবু একটু আগে বেরিয়ে যাওয়াতে রথীনবাবুর মনের ভেতর থেকে নিশির ডাকের মত সেই নিষিদ্ধ প্রেমের হাতছানি আবার উজ্জীবিত হয়ে ওঠে | বুঝলেন এই সুযোগ, আজ তাড়াতাড়ি  বেরিয়ে পড়া যাক, সেক্ষেত্রে বাড়ি পৌঁছতেও বেশি দেরি হবেনা| রাস্তাটা বাড়ির রাস্তার থেকে একটু ঘুরপথে হয়, তাই একটু আগে থাকতে বেরানো ভালো | বাড়ি ফিরতে বিশেষ দেরি হবেনা |

বাইরে বেড়িয়েই দেখেন ওই রুটের বাসটা আসছে,তিনি তাতে চট করে উঠে পড়লেন| এখনও ৫ টা বাজেনি তাই ভীড় এখনও অত নেই, জানলার পাশে বসার চমৎকার জায়গা পেয়ে গেলেন তিনি|
না,আজ তার ভাগ্যটাই ভালো | 

মনে তাঁর তীব্র উত্তেজনা, যেটা তিনি সব সময়ই  টের পান আশু সাক্ষাতের সম্ভবনায়, অন্য কেউ শুনলে হয়তো বলবে বুড়ো বয়েসে ভীমরতি কিন্তু তাতে কিছু যায় আসেনা তার|

আরে মশাই বুড়ো হচ্ছি বলে কি মানুষের জীবনে কোনো স্বাদ আল্হাদ থাকবেনা নাকি? আর জীবনে চুপি চুপি যেকোনো কাজ করার মজাটা খালি ছেলে ছোকরার দল কেন উপভোগ করবে? তিনিও পারেন | তবে তিনি সদা সতর্ক থাকেন, যদি চেনা কেউ এই রাস্তায় দেখে  ফেলে বা গিন্নি কিছু টের পায় তবে  চিত্তির! আর নিস্তার নেই |

গিন্নি এন্ড কো: যে একেবারে সন্দেহ করেনা তা নয়, তিনি যে মাঝে মধ্যেই অফিসে কাজ আছে বলে দেরি করে বাড়ি ফেরেন সে ব্যাপারে গিন্নির ভ্রু কুঞ্চিত হয় এটা  তিনি দেখেছেন, বিশেষত বছরের এই সময় তার সাধারণত কাজের চাপ অত বেশি থাকেনা একথা মিস মার্পলের অজানা নয়। 
হ্যাঁ, তিনি গিন্নিকে এই নামেই ডেকে থাকেন তার গোয়েন্দাগিরির জন্য।
এখনও যুৎসই প্রমান হাতে কিছু আসেনি বলে চুপ আছে, নইলে কি লঙ্কাকান্ড ঘটবে ভাবলেই রথীন বাবুর হৃৎস্পন্দন একলাফে অনেকটা বেড়ে যায়। 

কিন্তু এই কাজের চাপ, সংসারের অশান্তি এই সব কিছু থেকে মুক্তি পেতেই তাঁর এখানে আসা। 
জীবনানন্দকে জীবনে  দুদণ্ড শান্তি পাওয়ার জন্য যেমন বনলতা সেনের নাটোরে  যেতে হয়েছিল, তেমনি রথীন বাবু এখানেই আসেন, ওই শান্তি পেতে |
এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই বাস নির্ধারিত স্টপে এসে দাঁড়াল।
তড়িঘড়ি করে বাস থেকে নেমে পাশের গলিটার দিকে চট করে এগোলেন, ওই গলি দিয়ে একটু এগোলেই বামদিকে তৃতীয় দরজাটা | যাতে কেউ দেখতে না পায় তাই এই তৎপরতা |

ভেজানো দরজাটা ঠেলে ঢুকে পড়লেন রথীন বাবু |

তাঁর আর তর সইছেনা | তিনি অপেক্ষাতে বসে আছেন সেই পরিচিত চেয়ারটাতে, আর খালি সামনের দরজার দিকে উঁকিঝুকি মারছেন, চাহনিতে অস্থিরতা, কখন আসবে সে!! তাঁর ঠোঁট স্পর্শ করবে তার মোলায়েম কিন্তু মুচমুচে শরীরটাকে|

অবশেষে সে এল, মুগ্ধ চোখে রথীনবাবু তাকালেন তার দিকে-

সাদা ধবধবে প্লেটে রাখা মটন কবিরাজি কাটলেট আর সাথে কাসুন্দি ও শসা-পেঁয়াজের স্যালাড | টেবিলের পেছনের দেওয়ালের ব্যানারটাতে লেখা-

"শরৎ কেবিন"
- আমাদের কোনো শাখা নেই

No comments:

Post a Comment