Monday, October 1, 2018

আগমনী

পাড়ার মেয়ে-ঝি রা সবাই দল বেঁধে ইছামতীতে ভাসান দেখতে গেছে, পাড়া খালি, অন্যান্য বছর উমা ও যায়, ছেলের হাত ধরে। এবার অষ্টমীর অঞ্জলি দেওয়া ছাড়া গ্রামের মণ্ডপে উমা প্রায় যায়নি বললেই চলে । সেদিন ও ইচ্ছে ছিলনা, কিন্তু মা দুগ্গার পুজোতে না গেলে অকল্যাণ হয়। তাই প্রতিবারের  মত লালপাড় শাড়ীটা পড়ে সে অঞ্জলি দিতে গেছিল, একাই। কতদিন যে নতুন শাড়ি কেনা হয়না পুজোতে। উমার তার জন্য আফসোস হয়না। কিন্তু
একা যেতে ভালো লাগেনা তার। স্বামী ঢাকী তাই সে কোনবছর ই থাকতে পারেনা, প্রথম প্রথম মন খারাপ হত, এখন গা সওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু যবে থেকে গনু জন্মেছে সে তাকে ছাড়া কখনও থাকেনি , একবেলার জন্য ও না। তাই এবার যখন গনু বাবার সাথে কাঁসর বাজাতে যাবে বলল, উমা রাজি হয়নি, মায়ের প্রাণ আকুল হয়েছে। সে স্বামীকে বলেছে
- এতটুকু ছেলে চার দিন ধরে কাঁসর বাজিয়ে হাত ব্যাথা করলে?
মহেশ হেসেছে। বলেছে
- আসুক না, কলকাতার পুজো দেখবে।
উমার মন কেঁদেছে। কিন্তু শেষমেষ রাজি হয়েছে।
পুজোর চারদিন যে কিভাবে কেটেছে।  তাও ভালো বাড়ির পুজো দশমীর সকালেই বিসর্জন।
আজ উমা নারকেল নাড়ু বানিয়েছে, পালদের বাগানে নারকেল টা পড়েছিল অষ্টমীর দিন, সে তুলে এনেছে , নইলে পুজোগন্ডার দিনে নারকোল এই পাড়াগাঁয়ে ও সস্তায় পাওয়া যায় কোথায়?
গনু নারকোল নাড়ু ভালোবাসে। আর একটু খই-মুড়কি। এতদূর থেকে আসবে ওরা, চারদিনের এত খাটুনি। এসে ভাত খাবে। মায়ের হাতের রান্নার অভাব গনু এই কদিন কি অনুভব করেছে? বাবুদের বাড়িতে দুপুরের ভোগে অনেক কিছু হয় উমা শুনেছে ।

বেলা প্রায় পড়ে এলো, উমা ও খায়নি, অপেক্ষায় বসে থাকতে থাকতে চোখ লেগে আসে তার। চটকা ভাঙে যখন চোখের উপর চেনা দুটো খুদে হাতের স্পর্শ পায়।

-এবার ছাড়!
- উঁহু! তোমার জন্য একটা জিনিস আছে।
- ওরে ছাড়।
- এইবার !
- এটা কিরে?
মহেশ হাসে,বলে
- তোমার ছেলে তার বায়নার টাকা আর বখশিস দিয়ে তোমার জন্য কিনেছে ।
আনন্দে গণেশের চোখদুটো চকচক করে ওঠে।
- মা জানো কত জন আমাকে বখশিস দিল, দশ টাকা করে!
খুশিতে উমার চোখ ভরে ওঠে।
- কি দরকার ছিল এসবের। এই কদিন কাঁসর বাজিয়ে হাত ধরেনি তো?
উমার গলা জড়িয়ে ধরে  মাথা নাড়ে গণেশ।
- পুজোতে সবার মায়েরা নতুন শাড়ি পড়েছিল, মা দূর্গাও। আমার মায়ের না হলে কিভাবে চলবে? কিন্তু পুজো তো শেষ হয়ে গেল।
চোখ মোছে উমা,
- কে বলল? পুজো মানে কি জানিস? ঘরে ফেরা। মা দুর্গার ঘরে ফেরা, ঘরের মানুষদের ঘরে ফেরা। আমার তো আজ পুজো।
জড়িয়ে ধরে গনেশকে, বুকের মধ্যে।
বাইরে ইছামতির কাশবন অশ্বিনের বিকেলের হওয়াতে মাথা দোলায়। বিসর্জনের ঢাকের তালের মধ্যে কোথাও যেন আগমনীর সুর ভেসে রয়।

No comments:

Post a Comment