Tuesday, July 26, 2016

সেই শুরু !!!

মোবাইল নম্বর পাওয়াটা নেহাত ই কাকতলীয় ! কলেজের ফার্স্ট গেট এর বাইরে মোহন'স বলে একটা রেস্তোরাঁ ছিল (আজ আছে কিনা জানিনা ) , তার একটা দুর্নাম ছিল খাবার দিতে বড্ডো দেরি করে বলে , যদিও তাতে কলেজের ছেলেপুলে দের ভীড় কিছু মাত্র কমতো না | কিন্তু ভাগ্যিস ওরা খাবার দিতে লেট করতো, আর সেদিন একটু বেশি ই দেরি করছিল, হয়তো ভাগ্যদেবী সেদিন আমার প্রতি সুপ্রসন্ন ছিলেন |

এদিকে ঘড়িতে 10 টা বাজতেই চললো !! রাত 10 টাতে লেডিস হোস্টেল এর গেট বন্ধ হয়, আগে থেকে অনুমতি না নিলে তারপর প্রবেশ নিষিদ্ধ | যথারীতি মহুয়া ও সুদীপ্তার ভ্রূকুঞ্চিত | মহুয়া যদিও বা স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছিল, সুদীপ্তা খুব ই বিচলিত | বিশেষত এই সময় টাতে হোস্টেল এর ফোন পাওয়া ভগবানের দেখা পাওয়ার চেয়ে কিছু মাত্রা কম নয়| সবার কাছে তখন ও মোবাইল ফোন পৌঁছয়নি, সৌভাগ্য ক্রমে আমার কিছুদিন আগেই একটা জুটেছিল, নোকিয়া 3310 | ঈশিতার নম্বর টা মহুয়ার কাছে ছিল, সুতরাং ঠিক হলো ঈশিতা কে ফোন করা হোক, তাকেই দায়িত্ব দেওয়া হোক ব্যাপারটা ওয়ার্ডেন কে বোঝানোর| কিনতু এখানেও ওদের বিধি বাম | আগেই বলেছি সেদিন ভাগ্যদেবী সেদিন আমার প্রতি কৃপাদৃষ্টি দিয়েছেন, ঈশিতা ও সেদিন হোস্টেলে নেই, বাড়ি গেছে , তাই হোস্টেলে কথা বলতে গেলে "তাকেই" ফোন করতে হবে, তার কাছেও মোবাইল আছে, তাই নম্বর টা পেয়েই গেলাম ঈশিতার কাছ থেকে, ফোন বাজতেই "তার" গলা, ফোন টা সুদীপ্তা কে দিলাম , তাদের কথা হল, সমস্যা র ও সমাধান | আর তা সারা হতেই টুক করে নম্বর টা সেভ করে ফেললাম |

রাতে খাওয়া সারতে প্রায় এগারোটা , গার্লস হোস্টেলে ওদের কে পৌঁছে দিয়ে আমরা উলফের দিকে রওনা হলাম , রুম এ পৌঁছে খালি নতুন সেভ করা নম্বর টা দেখছি, হঠাৎ দু:সাহস জেগেই উঠলো, ফোনটা করেই ফেললাম |
- "হ্যালো"!
- "সুদীপ্তা-মহুয়া রা হোস্টেল এ পৌঁছে গেছে? ওদের ঢোকা নিয়ে ওয়ার্ডেন কোনো ঝামেলা করেনি তো? "
- "না না ! সব ঠিক আছে, সুদীপ্তা দি তো আমাদের ঘরেই বসে !"
-" আচ্ছা!! একটা কথা! আমি কাল এ কলেজ ছেড়ে চলে যাচ্ছি , জানিনা আর কোনোদিন দেখা হবে কিনা , তা যাওয়ার আগে কাল সকালে একবার দেখা করতে পারবি? পান্ডিয়া র বাইরে বক্সিং রিং এ ?"
- " কখন?"
- "এই ধরে 9 টা সাড়ে 9 টা !!! "
- " ঠিক আছে "
- "গুড নাইট !!"
না রাতের ঘুমে কোনো ব্যাঘাত হয়নি, আমি বরং দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েছিলাম , একটু নেশার ঘোর ছিল আর কি !! তাই সকল টাও খুব দ্রুত হয়ে গেলো....
সকালে বাইরে ব্রেকফাস্ট সেরে এসে দেখি, "সে" তার এক বান্ধবীর সাথে বক্সিং রিং এ ....
কথা হলো অনেক ক্ষণ !!! মাঝে স্যাবি র আবির্ভাব , আর ওই যে আগেই বলেছি ভাগ্যদেবী বড়ই সুপ্রসন্ন আমার দিকে , ভাগ্যিস স্যাবি এসেছিলো, তাতে কি লাভ হয়েছিল তার বিশদে নাই বা গেলাম !!!
শেষ দেখা করতে গিয়েছিলাম .. কিন্ত বিসর্জনের মাঝে যে নতুনের আগমনীর সুর ও বাঁধা থাকে সে সত্য টা সেদিন আরেকবার প্রমান হয়েছিল ! আষাঢ়স্য প্রথম দিবস তখন ও আসতে দুদিন বাকি ছিল .... কিনতু বর্ষা যে সেদিন নেমেছিল সে মনে , প্রাকবর্ষার সে বৃষ্টি ধুয়ে দিয়েছিলো মনের সব দ্বিধা !!
না সেদিনই বলতে পারিনি মনের কথা কেউ ই, সে অন্য গল্প, আজ থাক !!

না!!! ভেবেছিলুম গপ্পো তাকে ওখানেই শেষ করব, কিন্তু বি.ই. কলেজের পাবলিক কে শান্ত করা কি  ওতই  সহজ !!!
সেদিনকার পর গুটি গুটি করে দিন কেটে যাচ্ছিলো, আমি তখন হোস্টেল ছেড়ে বাগুইআটি তে মাসির খালি ফ্ল্যাটে একা ই  থাকি | চাকরির সন্ধান চলছে, এর মধ্যে আর "তার" সাথে যোগাযোগ হয়নি, মানে যোগাযোগের কারণ ও থাকতে হবে তো|
শেষ দেখা করে এসেছি তো কলেজ থেকে | ভাবছি একটা চাকরি পেলেই খবর জানানোর অজুহাতে ফোন তা করেই ফেলবো , কাজের মধ্যে সারা দিন একটু পড়া শোনা করা, আর সন্ধ্যের দিকে সজার সাথে জোড়া মন্দিরের মোড়ের চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেওয়া | 
অবশেষে সুযোগ তা এসে গেলো, চাকরি তা জুটেই গেলো, ইন্টারভিউ সেরে বাড়ি ফিরতে রাত, পরের দিন গিয়ে অফার লেটার আনতে আনতে  দিন গড়িয়ে বিকেল | 
ফেরার পথে ভাবছি এবার ফোন টা করব, আবার একটু বাঁধো বাঁধো ঠেকছে, তাই অনেক ভেবে ই-মেইল করব ঠিক করলাম, বাড়ি ফিরে একটু মুখ হাত ধুয়েই সিফি সাইবার কাফে তে ছুট |

ওমা!!! গিয়ে দেখি আরো বড় চমক, অরে না না , ওই সাইবার কাফে তে "সে" আসেনি, যতই হোক করণ  জোহরের মুভি তো নয় !!! ইমেইল খুলতেই সবার উপরে "তার" মেইল |
আজ কলেজে সেমিস্টার এর রেজাল্ট , সুদীপ্তা সেখানে গিয়েছিলো, তখন "তার" সাথে দেখা, আর সেখানেই আমার চাকরির খবর |
না আমার আর দেওয়া হলো না, তার উপর বেশ অভিমান ভরা এক মেইল , অন্যের কাছ থেকে খবর টা জানতে পারাতে, আমি সোজা ছুট দিলাম ফ্ল্যাটে, ফোন করা দরকার | পৌঁছে দরজা খুলবো ফোন টা বেজে উঠলো, sms , তার |
- " একটা মেইল করেছি , চেক করো |"
সঙ্গে সঙ্গেই ফোন করলাম..
সেই স্বর ..
-"হ্যালো" 
- "আমি জাস্ট তোকে মেইল করতেই যাচ্ছিলাম , আর টা করতে গিয়েই দেখি তোর মেইল |"
-"আরো কিছু, আমাদের জানাতে ভুলেই গিয়েছো ! মেসেজ করলাম তাই ফোন করেছো "
- "অরে না না !! ফোন করতেই যাচ্ছিলাম , তখন ই মেসেজ টা পেলাম !"

মান ভাঙলো কিনা জানিনা , শুধু এই জানি যে তার দিকে থেকেও "কুছ কুছ হোতা হ্যায় "|
এরপর কলেজের গঙ্গা আর কেষ্টপুরের খাল দিয়ে এতটা জল বয়ে যায়নি যত গুলো sms  আমাদের মধ্যে চলেছে, যদিও সব ই খুব সাধারণ, ফরওয়ার্ড গোছের, এর মধ্যে মাঝে মাঝে ঘটকীর (ঈশিতা তখন ঘটকীর ভূমিকাতে অবতীর্ণ ) সাথে ফোন করে হাল হকিকত বোঝার চেষ্টা!! 

আরো এক মাস কেটে গেলো এভাবেই, ভাবছি বলবো কি বলবো না |
যদিও আমি মোটামুটি নিশ্চিত উত্তর টা ধনাত্মক ই হবে, তবু একটা ভয় সব সময় ই , এটা কি সঠিক সময় !!!
হঠাৎ এরকম  ই একটা sms হাতে পেয়ে গেলাম , ফ্রেন্ডশিপ গোছের, তবে একটু হিন্ট আছে, আর তার সাথে আমি আমার মনের মাধুরী মিশিয়ে আরেকটা লাইন জুড়ে দিলাম!!!! ব্যাস জয় মা বলে পাঠিয়ে দিলাম !!
এতক্ষনে আমার পালস রেট নির্ঘাত 200 পৌঁছেছে !!! তখন ফোন এর বদলে বেজে উঠলো দরজার বেল !!!! এখন আবার কে ?
দরজা খুলে দেখি.... না না এবার ও "সে" নয়, সজা দাঁড়িয়ে !

আমাকে কেমন হতভম্ব দেখে সজা বললো
-" কিরে তুই আজ চায়ের দোকানে এলিনা , কি ব্যাপার মুখ টা ওরম কেন ? "
 এমন সময় ফোন টা বেজে উঠলো , মেসেজ নোটিফিকেশন...
- আমি দ্রুত সেটা পরে সজার দিকে আবার তাকালাম..
-"জাস্ট প্রপোজ করলাম, sms  e "
-"আরিব্বাস!!! কি বলে !!"
- "বড়ই গোলমেলে "
- "অরে কি বলবি তো ?"
-" এভাবে বললে হবে না, সামনাসামনি বলতে হবে !!!!!"

#সব চরিত্র বাস্তবিক , কোনো ঘটনায় কাল্পনিক নয় #

No comments:

Post a Comment